তুলসী পাতার উপকারিতা সম্বন্ধে সকলেরই প্রায় জানা আছে। আজ আমরা বিস্তারিত ভাবে জানবো (Bangla; tulsi patar upokarita ) তুলসী পাতার কিছু গুণাবলী সম্পর্কে বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস.
তুলসী কেবল পাতা নয় প্রায় 5000 বছর ধরে তুলসী ভারতের উত্তর-মধ্য-পূর্বাঞ্চলে পাওয়া যায়। বর্তমানে ভারতবর্ষে এবং অন্যান্য জায়গার খাদ্য তালিকার মধ্যে তুলসী পাতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তুলসী গাছ বিভিন্ন রকমের অসুস্থতার চিকিৎসা করতে সমানভাবে কার্যকরী। তুলসী পাতার এতোখানি ঔষধি গুণ রয়েছে যে আয়ুর্বেদে তুলসী পাতাকেও এক ধরনের ওষুধ বলে গণ্য করা হয়।
Tulsi patar gunagun in bengali
তুলসী পাতার অনেক রকম ধার্মিক মহত্ত্ব আছে এবং তুলসীর ব্যবহার মুখ্য রূপে ঘরোয়া চিকিৎসায় করা হয়ে থাকে। তুলসী পাতা ডায়াবেটিস দূর করতে সক্ষম। তুলসীপাতাকে চা, রস ও পাউডার হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এবং তুলসী পাতা কেবল ঔষধ হিসাবে সেবনের ক্ষেত্রেই নয় ত্বকের যত্নে তুলসী পাতার ব্যবহার অনেক কার্যকরী একটি উপাদান।
তুলসী পাতা ভিটামিনস ও মিনারেলস এ ভরপুর। মুখ্য রূপে তুলসীতে ভিটামিন-সি, ক্যালসিয়াম, জিংক, আয়রন ও ক্লোরোফিল পাওয়া যায়। এছাড়াও তুলসীতে সাইট্রিক, টারটারিক ও ম্যালিক অ্যাসিড পাওয়া যায়। এছাড়াও তুলসী পাতার মধ্যে পাওয়া যায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল।
আপনি কি জানেন, খালি পেটে তুলসী পাতা খেলে কি হয়? আপনার স্বাস্থ্য ও দেহ ভালো রাখতে তুলসী লাভজনক। মনীষীদের মতে, তুলসী পাতা চিকিৎসার জন্য সবথেকে বড় আয়ুর্বেদিক মহাঔষধি গাছ। এছাড়াও সকালে তুলসী পাতা খেলে শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম মজবুত হবে। তুলসীতে যে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পাওয়া যায় তা রোগ সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করে শরীরকে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।
তুলসী পাতার উপকারিতা
আজ আমরা জানবো তুলসী পাতা খেলে কি হয়? এবং তুলসীর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্বন্ধে।
আশা করছি এগুলি জানার পর আপনি ও নিয়মিত সকালে ও খালি পেটে তুলসী সেবন করতে বাধ্য হবেন। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, নিয়মিত রূপে তুলসী পাতা সেবন করলে আমাদের শরীরে কি কি লাভ হবে–
1. হাই ব্লাড-প্রেসার
তুলসীর চার থেকে পাঁচটি পাতা রোজ সকালে খেলে হাই ব্লাড প্রেসারের সমস্যা দূর হয়ে যায়।আর আমাদের ব্লাড সার্কুলেশন সঠিক ভাবে চলতে শুরু করে।
2. আর্থ্রাইটিস
তুলসীর শিকড়, পাতা, কান্ড এবং বীজ শুকিয়ে পাউডার বানিয়ে গুড়ের সাথে মিশিয়ে বরি বানিয়ে রোজ সকালে দুইটি করে জলের সাথে খেলে আর্থ্রাইটিস অর্থাৎ জয়েন্টের সমস্যা দূর হবে। তুলসী তে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা জয়েন্টের ব্যথায় কার্যকরী।
3. মানসিক চাপ
তুলসীকে মানসিক চাপমুক্ত রাখার ঔষধ হিসাবে ধরা হয়।এই পাতায় রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও রোগ প্রতিরোধ করার উপাদান। তুলসী শরীরের কর্টিসোল মাত্রা কমায় ও অতিরিক্ত উত্তেজনা ও চাপ থেকে মুক্তি দেয়।শরীরে নানান রাসায়নিক চাপ থেকেও তুলসী পাতা উপকার প্রদান করে।তুলসীর দ্বারা অন্তর্নিহিত শক্তি জেগে ওঠে।
4. ক্যান্সার
তুলসী ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধেও কার্যকরী। তুলসী পাতায় অ্যান্টি কার্সিনোজেনিক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরের রক্ত প্রবাহ কে সীমিত করে ওরাল ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের বিকাশকে বন্ধ করতে সাহায্য করে।তাছাড়া তুলসী তে রয়েছে রেডিও প্রটেক্টিভ যা টিউমারের কোষগুলিকে মেরে ফেলে।তুলসী তে থাকা মাইরেটিনাল,এপিজেনিন,লিউটিউলিন এসবই ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
5. সর্দি কাশি কমাতে
তুলসী পাতা সর্দি কাশির ঔষধ হিসাবে বেশ উপকারী।তুলসী পাতার চা – এ অ্যান্টি সেপটিক ও অ্যান্টি ব্যাকটেিয়াল প্রপাটি থাকে যা সর্দি কাশির লক্ষণকেও দূর করে।
6. হাঁপানি বা অ্যাজমা
তুলসী পাতা হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগেও আরামদায়ক।তুলসী পাতার সঙ্গে মধু ও আদার রস মিশিয়ে খেলে হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগ থেকে অনেকটাই আরাম পাবেন।
7. হার্টের সমস্যা
হার্টের রোগ জন্মায় হাইপারটেনশন,উচ্চ রক্তচাপ বা কোলেস্টরলের কারণে।তুলসী পাতার দ্বারা রক্ত জমাট বাধা ও হার্ট অ্যাটাক রোধ করা যায়।কোলেস্টরল ও ফ্যাট এবং ওজন কমাতে তুলসী পাতা ঔষধি রূপে কাজ করে।
8. শরীরের স্বাভাবিক কিছু সমস্যা
প্রতিদিন আমাদের শরীরে অনেক সমস্যা হয়,যেমন- গ্যাসের সমস্যা,মুখের দুর্গন্ধ,পাচন প্রক্রিয়ায় সমস্যা,ক্লান্তি,গলাব্যথা,ত্বকের সমস্যা ও মাথাধরা তথা কোমরে ব্যথা প্রভৃতি দূর করতে নিয়মিত তুলসী পাতা খাওয়া উচিত।গ্যাসের সমস্যা ও পাচন ক্রিয়া সঠিক রাখতে তুলসীপাতা কে জলে ভিজিয়ে খান।
এছাড়া ত্বকের সমস্যাতেও তুলসী বেশ কার্যকরী।তুলসী গাছের শিকড় কে শুকিয়ে পাউডার বানিয়ে ও সমপরিমাণ আদার পাউডার বানিয়ে জলে মিশিয়ে পান করলে বিভিন্ন ত্বকের সমস্যা যেমন-ব্ল্যাকহেডস,কালো ছোপ,রোদে পড়ে যাওয়া লালচে দাগ ও চুলকানি দূর হবে।
ব্রণের সমস্যা দূর করতেও তুলসীপাতার পেস্ট ও তার সাথে চন্দনের পেস্ট বানিয়ে লাগালে দ্বিতীয় বার আর ব্রণের সমস্যা দেখা দেবে না।আর ত্বকও অনেকটাই উজ্জ্বল হবে।
9. কিডনি স্টোন
তুলসী তে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান শরীরের ভেতর থেকে নানা বিষক্রিয়া পদার্থ বের করে ফলে ডিহাইড্রেশন কমে যায় এবং কিডনির কার্য সচল অবস্থায় থাকে ফলে স্টোনগুলি রোধ হয়।
10. লিভারের সমস্যা
তুলসী তে থাকা হেপাটো প্রটেক্টিভ উপাদান যা লিভার নষ্ট হওয়া কে রোধ করে।তবে অতিরিক্ত লিভারের সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তবেই তুলসীপাতা খাবেন।
তুলসী পাতার অপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক
আমরা সবাই জানি, সবার স্বাস্থ্যর ধরণ সমান নয়। তাই সব খাবার সবার জন্য সমান ফলদায়ক নয়। সুতরাং কাদের ক্ষেত্রে এবং কেন তুলসী পাতা খাওয়া উচিত নয় আর খেলে কি হবে তাও আমরা জানব, চলুন তুলসী পাতার ক্ষতিকর দিক সম্বন্ধে জেনে নেওয়া যাক.
1 . গর্ভবস্থা
গর্ভাবস্থার সময় বা মা হওয়ার পর স্তন্যপান করালে তুলসী পাতা খাওয়া উচিত নয় অন্যথা জটিলতা দেখা দিতে পারে,এছাড়াও তুলসীপাতা মহিলাদের বন্ধ্যাত্বের কারণ হয়।
2. রক্তপাতের সমস্যা
অতিরিক্ত তুলসী সেবন করায় শরীরে রক্তের প্রবাহ বেড়ে গেলে স্বাভাবিক রক্তের জমাট হওয়ার প্রবণতা নষ্ট হয় ফলে রক্তপাতের সমস্যা দেখা দিতে পারে।বিশেষ করে সার্জারি বা কাটাছেঁড়া হলে তুলসীপাতা এড়িয়ে চলুন অন্যথা সমস্যার মুখোমুখি হবেন।
3. নিম্ন রক্তচাপ
তুলসী পাতাই অতিরিক্ত পটাশিয়াম থাকায় রক্তচাপ কমে যেতে পারে।তাই আপনার যদি নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা থাকে তাহলে তুলসীপাতা না খাওয়াই ভালো।
তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম
• সকালে খালি পেটে কয়েকটি তুলসী পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন।
• তুলসী পাতা দিয়ে আদা ও চা পাতা ফুটিয়ে চা তৈরি করেও খেতে পারেন।
• তুলসী পাতা ও এলাচ একসঙ্গে মিশিয়ে জল দিয়ে ফুটিয়ে খেতে পারেন।
• আপনার পছন্দের খাদ্যের সঙ্গে তুলসীপাতা মিশিয়ে রান্না করেও খেতে পারেন।
• তুলসির পাতা,কান্ড,শিকর রোদে শুকিয়ে পাউডার বানিয়ে বরি বানিয়ে ফেলুন তা গুড়ের সঙ্গে মিশিয়ে অথবা শুকনো তুলসির পাতা,কাণ্ডকে গুরিয়ে পাউডার বানিয়েও ব্যবহার করতে পারেন।
➤ আরও জেনে নিন: নিম পাতা খাওয়ার উপকারিতা গুনাগুন ও পার্শ্বপতিক্রিয়া