পৃথিবীর অর্ধেকর বেশী অর্থ অল্প কিছু মানুষের কাছে আছে, আর তাদের কাছে এই অর্থ থাকার কারণ হলো তাদের পরিশ্রম ও সঠিক সংকল্প, তারা তাদের জীবনে কোনো কাজকে মাঝ পথে ছেরে দেয়নি, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করেছে জীবনের প্রতিটি বাধার আর সমস্যার সঙ্গে, তাই তারা পৃথিবীর ধনী, নামী, বিখ্যাত আর সফল ব্যাক্তি,
পৃথিবীতে তিন ধরনের মানুষ আছে যে কোনো কিছু না করে শুধু ধনী ব্যাক্তি এবং সব কিছু পাওয়ার দারুণ ইচ্ছে প্রকাশ করতে চায়, আর জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে খুশি থাকতে চায়,
দুই : কিছু ব্যাক্তি আছে যারা জীবনে খুশি থাকার সাথে সাথে ধনীও হতে চায়, তাই কোনো কিছু কাজ অনেক কষ্ট করে শুরু করে ফেলে কিন্তু শেষ পর্যন্ত না পৌঁছেই মাঝ পথে ছেরে দেয় আর বলে এটা আমার দ্বারা আর সম্ভব না,
তিন: আর কিছু ব্যাক্তি আছে যারা জীবনে উন্নতির ক্ষেত্র একদম একনিষ্ঠ ভাবে কাজ করে যায়, হাজার বাধা বিপত্তি কাটিয়ে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে চলে, আর শেষ পর্যন্ত সে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়, আর জীবনে উন্নতির সঠিক পথ একমাত্র তারাই খুঁজে পায়,
চলো এ বিষয়ে একটি গল্পকথা তোমাদের সাথে সেয়ার করি……..এক গুরুর তিন শিষ্য ছিলো, গুরু কেবল এক শিষ্যেকে বেশি পছন্দ করতেন, আর বাকি যে দুই শিষ্য ছিল তারা মনে মনে ভাবত, গুরু কেবল একজনকেই বেশি পছন্দ করেন, কি আছে ওর মধ্যে যা আমাদের মধ্যে নেই, একদিন তারা জিজ্ঞাসা করলো গুরুজীর কাছে,
গুরুজী বললো আমি তোমাদের কাউকেই আলাদা ভাবে দেখি না, তোমরা সবাই আমার চোখে সমান, আমি তোমাদের মধ্যে থেকে একজনকে বেশি পছন্দ করি কারণ ওর মধ্যে কাজের যে ইচ্ছে শক্তি আছে তা আমি অন্যকারোর মধ্যে খুঁজে পাই না, ও যে কাজ শুরু করে তা শেষ করার সঠিক মনোবল ও ইচ্ছে শক্তি ওর মধ্যে আছে,
তখন বাকি দুই শিষ্য বললো ঠিক আছে গুরুজী, তাহলে আমাদের তিনজনেরই একসাথে একটা পরীক্ষা নিন, গুরুজী বললেন সঠিক সময়ে তোমাদের সে পরীক্ষার আয়োজন করা হবে,
কিছুদিন পর গুরুজী তিনজনকে ডাকলেন আর বললেন, কিছু দূরে ঐ যে পাহাড় দেখতে পাচ্ছো ঐ পাহাড়টি অত্যন্ত দুর্গম আর কঠিন, ওই পাহাড়ের চূড়ায় চড়তে গিয়ে হয়ত তোমাদের প্রানহানীর আসংক্ষা থাকতে পারে, তোমরা কি ঐ পাহাড়ে চড়তে পারবে? আর ঐ পাহাড়ের সর্ব্বোচ চূড়ায় রয়েছে তোমাদের জীবনে উন্নতির মূল ঠিকানা।
গুরুজীর এই কথায় তিন শিষ্য রাজি হয়ে গেল, এবং পাহাড় চড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো, পাহাড়ের কাছে গিয়েই এক শিষ্য বলে ওঠলো এতো অনেক বড়, দুর থেকে দখে এতো বড়ো মনে হয়নি, গুরুজী ঠিকই বলেছেন প্রাণনাশের আশঙ্কা রয়েছে, আমি চড়ব না পাহাড়, তোমরা যাও, আমি ফিরে যাচ্ছি;
বাকি দুই শিষ্য পাহাড়ের কিছুদূর ওঠে মাঝ বরাবর ওপস্থিত হওয়ার পর, রূপা বেষ্ঠিত আবরণ দেখতে পেলো, দুই শিষ্যের মধ্যে থেকে এক শিষ্য বললো চলো আর কষ্ট করার প্রয়োজন নেই, এখান থেকে রূপা নিয়ে আমরা ফিরে যাই, এই দিয়েই আমরা অনেক দিন সুখে এবং নিশ্চিতে জীবন যাপন করতে পারবো,
কিন্তু যে শিষ্য কোনো কাজে শেষ লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা বদ্ধ, সে বললো গুরুজী বলেছেন সর্বোচ্চ চুরতেই রয়েছে জীবনের আসল সন্ধান, তাই আমি শেষ প্রযন্ত না গিয়ে থামবনা, তাহলে তুমি যাও আমি আর তোমার সাথে যেতে পারবো না, এই বলে সে রূপার বেষ্টন নিয়ে নিচে নেমে এলো,
তৃতীয় শিষ্য একাই বুকে সাহস আর মনে মনোবল নিয়ে তার গ্রন্তব্যে পৌঁছাতে রওনা দিলো, আর অনেক বাধা অতিক্রম করে তার লক্ষ্যে পৌঁছে দেখলো হিরা, জহরত, চুনি পান্না, স্বর্নরত্ন দিয়ে ভরা পাহাড়ের চূড়া, সে সেখান থেকে সব মূল্যবান জিনিস সংগ্রহ করে ফিরে এলো,
যখন তিন শিষ্য গুরুর সঙ্গে দেখা করতে এলো, গুরু তাদের জিজ্ঞাসা করলো তোমরা তিনজনই কি পাহাড়ের শেষ চূড়া পর্যন্ত পৌঁছে ফিরেছ? তখন শিষ্যরা তাদের ভ্রমণ কাহিনীর সব সত্য কথা গুরুজীকে বললো,
গুরুজী বললেন এখানে বিষয় হলো সঠিক সংকল্পের ধণ সম্প্যতির মূল্য এখানে খুবই কম, আমি যাকে বেশি পছন্দ করি সে মূল্যবান জিনিস পেয়েছে তার কারণ হলো, তার সংকল্প সঠিক ছিল, সে নিজের কাজে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলো এবং তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আমরণ চেষ্টা চালিয়েছে এবং তা সম্পন্ন করেছে, তাই আমি তাকে এতো ভালোবাসো সকলের থেকে,
আর এই তিন শিষ্য হলো আমাদের মনের আলাদা আলাদা পর্যায় ও অবস্থা,
যখন আমরা কোনো কাজ শুরু করি অভীষ্টৈ পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে, তখন আমাদের সামনে অনেক বাধা আসে, আর এই বাধাই সমস্যার দেয়াল তৈরি করে দেয় আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর রাস্তায়, আর আমরা এই বাঁধা কে না সরিয়ে নিজের কাছে হেরে গিয়ে পিছু হাটতে থাকি, এবং অন্য সেই কাজ ছেরে দিয়ে অন্য কোনো কাজে নিজেকে নিযুক্ত করে ফেলি,নিজের জীবনের মূল্যবান সময়ের অনেকটা নষ্ট করে ফেলি , যেখানে ছিলাম তার থেকেও আরও খারাপ অবস্থায় হয়ত ফিরে আসি,
আর আমাদের মধ্যে এমন কিছু মানুষ আছি, জীবনে যদি একটু উন্নতি করে ফেলি সেখানেই থেমে যায়, আর মনে মনে বলি আমি যা পেয়েছি তাই থাক, কি হবে বেশি কিছু, এতেই সুখী, হয়ত মন আরও বেশি কিছু আশা করতো কিন্তু আমরা তা ইগনর করি, নিজের মনের কাছে ধরা দিই না নিজেকে,
আর এমন কিছু মানুষ আছে যারা মনে মনে যেটা ঠিক করে নেয় জীবনে উন্নতির উদ্দেশ্যে, সেই উদ্দেশ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত কোনো বিরতি দেয় না নিজেকে, এরকম ব্যাক্তির সংখ্যা অনেক কম আছে পৃথিবীতে, আর যে কজন আছে তারা সবাই তাদের জীবনে সফল ও ধনী ব্যাক্তি,
কিছু ব্যাক্তির ভাবনা এমন হয় তারা ভাবে কি হবে জীবনে বেশি পরিশ্রম করে বেশি টাকা পয়সা ইনকাম করে, এসব না করেই বেশতো কাটছে জীবন, এসব কথা ভাবতে ভাবতে আধো চোখে ঘুমিয়ে রাত কাটায়, আর এই ঘুম কখনই কোনো ব্যাক্তিকে সুখী করতে পারে না,
কিন্তু তারা কি একবারও ভেবে দেখেছে ওই মানুষটির কথা যে সারাদিন পরিশ্রম করে অনেক বাধা কাটিয়ে জীবনে উন্নতির শিখরে পৌঁছেছে তার রাতের ঘুম কতো সুখের ও শান্তির!
তাহলে আমরা কি চাই? কোনো কিছু না করে জীবনে সফল হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ, না কোনো কাজ শুরু করে শেষ পর্যন্ত না পৌঁছে ছেরে দেয়া, নাকি যা মনে মনে যা ঠিক করেছি জীবনের উন্নতির লক্ষ্যে তা সম্পন্ন করা,
তোমার জীবনের আসল গুরু হলে তুমি নিজে, শুধু সঠিক সংকল্প নিতে হবে আর নিজের ভিতর কার ইচ্ছে শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে, তাহলেই তুমি সফল মানুষ।