প্রত্যেক শিক্ষার্থী চান মাধ্যামিক পরীক্ষার রেজাল্ট ভাল করতে। সকলেই চায় পরীক্ষায় বেশি নাম্বার পেয়ে পাস করতে। আর এই পরীক্ষায় হল শিক্ষা জীবনের প্রথম পরীক্ষা। মাধ্যামিক পরীক্ষার রেজাল্টের উপর ভিত্তি করেই শুরু হয় শিক্ষার্থীদের বাকি পড়াশুনা গুলো। অনেক সময় বেশি পড়াশোনা করেও মাধ্যমিকে নাম্বার মনের মত আশানুরূপ হয়না। পড়াশোনার পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আর এই বিষয় গুলো অনুসরন করলে পরীক্ষার রেজাল্ট আপনার আশানুরূপ হবে।
মাধ্যামিক পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার টিপস
পরীক্ষার কক্ষে স্বাভাবিক থাকা: পরীক্ষার কক্ষে হতাশা বা দুশ্চিন্তা হলে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করতে হবে। পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার জন্যে ভীতি অনেক সময় বাধা হয়ে দাড়ায়। অনেক শিক্ষার্থী অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে অনেক জানা প্রশ্নের উত্তর ঠিকভাবে লিখতে পারেন না। প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর বাইরের সব চিন্তা বাদ দিয়ে প্রশ্নপত্রের উপর মনোযোগ দিতে হবে। প্রশ্নপত্রে অন্তত একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে উত্তর লেখা শুরু করতে হবে।
উত্তরপত্র সাজিয়ে নেওয়া: পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার জন্যে উত্তরপত্রটিকে শিক্ষকের আকর্ষনীয় করে তোলা এর জন্যে ভালো উত্তরপত্রটিকে ভালো করে সাজিয়ে নিতে হবে। উত্তর পত্রের উপরে, নিচে এবং ডানে এক ইঞ্চি রেখে লেখা শুরু করলে ভাল হয়। মার্জিন ব্যবহার করা যেতে পারে মার্জিন টানার জন্য পেন্সিল ব্যবহার করা যেতে পারে। কোন ভাবেই লাল রংয়ের ব্যবহার করা যাবে না। উত্তরপত্রে বিভিন্ন প্রশ্নের নম্বর লেখার পর এর নিচে সাইন পেন দিয়ে দাগ টেনে দিতে পারেন। সব শেষে খেয়াল রাখতে হবে প্রশ্নপত্রে কোনো প্রকারর ভাঁজ না পরে।
প্রশ্নপত্রে মনোযোগ: প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর পুরো প্রশ্নটি মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। কোন আংশিক পরিবর্তন হয়েছে কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে। প্রশ্নপত্র দেখে মনে মনে পুরো পরীক্ষার পরিকল্পনা করবেন। আপনি কিভাবে শুরু করবেন এবং কিভাবে শেষ করবেন তার ছক করে নিলে পরীক্ষা অনেক সহজ হয়ে যাবে। এবং পরীক্ষার রেজাল্ট ভাল হবে।
প্রশ্ন নির্বাচন করা: পরীক্ষক যখন খাতা মূল্যায়ন করবেন তখন শুরুতেই লেখার মান ভালো দেখলে শিক্ষার্থীর প্রতি ইতিবাচক ধারণা আসবে। তাই মাধ্যামিকে ক্ষার্থীদের খেয়াল রাখতে হবে যেসব প্রশ্নের উত্তর ভালো জানা এবং মনে আছে এবং বেশি নম্বরের সেগুলো আগে লেখাটায় বুদ্ধিমানের কাজ। এতে ওই বিষয়ে ভালো নম্বর পাওয়া সহজ হবে এবং পরীক্ষার রেজাল্ট আশানুরূপ হবে।
সময়কে সঠিক ভাবে প্রয়োগ করা: পরীক্ষার্থীদের মধ্যে সব চেয়ে বেশি যেটা সমস্যা পড়তে হয় সেটা হলো সময়ের অভাব। বিশেষ করে শেষের দিকে তাদের সময় নিয়ে অনেক বেশি হতাশ হয়ে পরতে হয়। তাই শিক্ষার্থীদের প্রধান কাজ হলো সময়কে ঠিকমতো ভাগ করে নেওয়া। প্রশ্নের মান অর্থাৎ নম্বর অনুযায়ী কতটুকু লিখতে হবে তা নির্ধারণ করে লিখতে হবে। বেশি নম্বরের প্রশ্ন গুলো যতটা সম্ভব ভালো করে দিতে হবে। তবে তা হতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। এজন্য প্রথমেই প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরের জন্যে নির্দিষ্ট সময় ভাগ করে নিলে ভাল হয়।
পর্যায়ক্রমে লেখা: তুলনামূলক সহজ ও জানা প্রশ্নের উত্তর পর্যায়ক্রমে পর পর লেখা অর্থাৎ লেখায় ভালো, এবং উত্তরপত্র পরিচ্ছন্ন হতে হবে। ভালো নম্বর পেতে হলে অভার রাইটিং কাটাছেঁড়া অস্পষ্ট লেখা পরিহার করতে হবে। লেখায় কোন ভুল হলে একটি সমান্তর দাগের দ্বারা কেটে দিতে হবে। লেখার ভাষা সহজ সরল ও প্রাঞ্জল হওয়ায় ভালো এতে করে পরীক্ষার রেজাল্ট ভাল করা সম্ভব হবে।
সুস্পষ্ট ছবি অঙ্কন: গণিত ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন চিহ্ন ও চিত্র স্পষ্ট করে লিখতে হবে। একটি প্রশ্নের উত্তর লেখা শেষ হলে পরবর্তী পৃষ্ঠায় পড়ের প্রশ্নের উত্তর শুরু করাই ভালো।
পয়েন্ট করে লেখা: প্রশ্নের উত্তর গুলি পয়েন্ট আকারে গুছিয়ে লিখলে উত্তরটি পরিপূর্ণতা পাবে। তাই যতোটা সম্ভব উত্তর পয়েন্ট আকারে লেখার চেষ্টা করতে হবে। আরও ভালো হয় হেডিং ও সাব হেডিং পয়েন্টের মধ্যে ব্যাবহার করলে।
প্রয়জনের বেশি না লেখা: লেখা অযথা বড় করা যাবে না, অনেকে মনে করেন বেশি লিখলে বেশি নম্বর পাওয়া যায় এটি একটি ভুল ধারণা। অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক লিখে উত্তর বড় করার চেয়ে প্রাসঙ্গিক ও যথাযথ উত্তরে বেশি নম্বর পাওয়া যায়। অপ্রসিঙ্গিক লিখে খাতা ভর্তি করলে সময় নষ্ট হবে।
অনেকেই কয়েক লাইন লিখে এক পৃষ্ঠা শেষ করে পরবর্তী পৃষ্ঠা লেখা শুরু করেন। পরীক্ষকরা এতে বিরক্ত হন। আবার খুব সংক্ষিপ্ত উত্তরে প্রয়োজনীয় অংশ না থাকলেও কাঙ্ক্ষিত নম্বর পাওয়া যায় না। আকর্ষণীয় ভূমিকা ও উপসংহার ভালো নম্বর পাওয়ার প্রধান শর্ত।
কোন প্রশ্নের উত্তর না পরলে: কমন প্রশ্নের উত্তর লেখা শেষ হওয়ার পর যথেষ্ট সময় থাকলে তবেই আনকমন প্রশ্ন গুলো নিয়ে ভাবা উচিৎ। শ্রেণী কক্ষে শিক্ষক এ বিষয়টির উপর আলোচনা করেছেন কিনা তা মনে করার চেষ্টা করতে হবে। যতটুকু মনে পড়ে ততটুকু সাজিয়ে লেখা যেতে পারে। তবে বেশি অনুমানের নির্ভর না হওয়াই ভালো। কোনো বিষয়ের উপর ভালো ধারণা না থাকলে বানিয়ে লিখলে ভালো নম্বর পাওয়ার আশা করা যায় না।
সংস্করণ করা: কোথাও কোন ভুল আছে কিনা কিংবা কোনো প্রশ্ন বাদ পড়ল কিনা মনোযোগ দিয়ে দেখতে হবে। সংস্করণের জন্য শেষ দশ থেকে পনের মিনিট সময় বের করেতে হবে। এই সময় সবার আগে লক্ষ করতে হবে প্রশ্নের সঙ্গে উত্তর পত্র লেখা ক্রমিকের ঠিকঠাক মিল আছে কিনা। প্রশ্নের কোন অংশের ক্রমিক যেমন “ক” ও “খ” ঠিক মতো লেখা হয়েছে কিনা দেখতে হবে। ক্রমিক নম্বর ভুল হলে নম্বর না পাওয়ার আশঙ্কাই বেশি।
অসতর্ক না হওয়া: অনেক সময় অসতর্কতা বা অসাবধানতা অথবা ছোট্ট একটি ভুলের কারণে উত্তরপত্র বাতিল হতে পারে। তাই সতর্কতা একান্ত জরুরি। ও.এম.আর. ফর্ম সঠিক ভাবে পূরণ করতে হবে। পরীক্ষার রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, বিষয়, কোড প্রভৃতি সঠিকভাবে লেখা হয়েছে কিনা তা ভালোভাবে দেখতে হবে। আর অতিরিক্ত পেজ নেওয়া হয়েছে কিনা সেদিকে নজর দিতে হবে। যদি অতিরিক্ত পেজ নেওয়া হয়ে থাকে তবে সঙ্গে সঙ্গে তা মূল খাতায় লিখে রাখতে হবে।
পরীক্ষা সম্পূর্ণ করার পর: বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা মাধ্যামিক পরীক্ষাকে নিয়ে অনেক বেশি চিন্তিত থাকেন। আর যে পরিক্ষাগুলো সম্পন্ন হয়ে গেছে সে গুলকে নিয়ে বেশি ভাবতে থাকেন। পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করতে হলে যে পরীক্ষা গুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলকে নিয়ে আর না ভাবা এতে করে মনে খারাপ প্রভাব পরতে থাকে। পরীক্ষা খারাপ হক বা ভালো হোক সেটার জন্য বেশি চিন্তিত না থাকা। আগের পরীক্ষার কোনো রকম প্রতিক্রিয়া পরেরে পরীক্ষার উপর না পরে সে দিকে লক্ষ্য রাখা। ভাবার বিষয় যেটা সেটা হলো পরের পরীক্ষার জন্য অগ্রসর হওয়া।
আরও পড়ুন নতুন বছরের কিছু সংকল্প » New Year Resolutions In Bangla