আয়ুর্বেদ ঔষুধ কি? What is ayurved medicine: প্রথমে জেনে আমরা জেনে নিই আয়ুর্বেদ কি? আয়ুর্বেদিক মেডিসিন আমরা কেন ব্যবহার করবো? আয়ুর্বেদিক ঔষুধের কার্যকারিতা ও উপকারিতা এবং গুনাগুন সম্পর্কে;
প্রাচীন কালে ভেষজ পদ্ধতিতে বা নানান রকমের উদ্ভিদের সাহায্যে মানুষের চিকিৎসা করা হতো, যা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা নামে পরিচিত, আয়ুর্বেদ শব্দের অর্থ হলো আয়ু মানে জীবন এবং বেদ মানে জ্ঞান বা বিদ্যা, অর্থাৎ আয়ুর্বেদ শব্দের অর্থ জীবন জ্ঞান ও জীব বিদ্যা, মনে করা হয় এই আয়ুর্বেদ চিকিৎসা প্রায় পাঁচ হাজার বছরের পুরাতন একটি পদ্ধতি, আয়ুর্বেদ বা জীববিদ্যা বর্তমানে হার্বাল নামে পরিচিত; অ্যালোপ্যাথিক মেডিসিনের ব্যবহারের ফলে মানব দেহে সাইড এফেক্ট দেখা দেয়ার কারণে আয়ুর্বেদ মেডিসিনের ব্যবহার বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে, বাংলাদেশ, ভারতবর্ষ ও পাকিস্তানে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা ব্যাপক হারে প্রচলিত আছে,
আয়ুর্বেদ মেডিসিন কোনো রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই ননান রকম জটিল ও কঠিন রোগ নিরাময় করতে সক্ষম, তাই এই আয়ুর্বেদিক ঔষধী কে অ্যালোপ্যাথিক মেডিসিনের অল্টারনেটিভ ট্রিটমেন্ট হিসাবে মান্যতা দেয়া হয়েছে,
মানব স্বাস্থ্য কল্যাণে আয়ুর্বেদ চিকিৎসার কিছু নিয়মাবলী
স্নান:
স্নান করার ব্যাপারে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বলা হয় যে ভরা পেটে বা ইনডাইজেশন হলে স্নান করা উচিৎ নয়, এটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর, কারণ যখন পেট ভরপুর আহার গ্রহণ করে ফেলি কিংবা যখন ইনডাইজেশন হয় তখন শরীরের রক্ত সঞ্চালন মাত্রা অধিক মাত্রায় বেড়ে যায়, এবং রক্তের ফ্লো এই সময় পেটের দিকে বেশি থাকে,
তাই এই সময় যখন আমরা স্নান করি রক্তের যে প্রবাহ পেটের দিকে ছিলো তা পুরো শরীরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, ফলে পেটের মধ্যে পড়ে থাকা খাবারের ঠিক মত হজম হতে পারে না, যার কারণে বিভিন্ন পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বমি বা বমন:
বমন অথবা বমি করা নামক এরকম চিৎসারা কথা হয়তো আমরা শুনেছি, রোগীকে এমন কিছু মেডিসিনের দেওয়া হয় থেকে যার সাহায্যে আপনাআপনি বমি এসে যায়, এই বমন এর ব্যাপারে আয়ুর্বেদে বলা হয়, যদি রোগীর অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়া কফ্কে বের করার সঠিক সময় হলো সকাল। কেননা অতিরিক্ত কফ সকালে বমির খুব ভালো করে বের হয়ে যেতে পারে।
ইন ডাইজেশন মেডিসিনের ব্যবহার:
ইন দাইজেশন দূর করতে আয়ুর্বেদে ওষুধ নেওয়ার নিয়ম হলো খবরের পরে, রাত্রিতে, ও কিছু ওষুধ এমনও আছে যা খাবার সময় ব্যাবহার করা হয়, অর্থাৎ আপনি যদি চারটে রুটি খান তবে দুটো খাওয়া হলে ওষুধ সেবন করে এবার দুটো রুটি খেতে পারেন;
মধুর ব্যবহার:
আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় মধু বহুল ব্যবহৃত একটি মহাঔষধি, যার প্রাচীন কাল থেকেই ব্যাবহার হয়ে আসছে, মধুতে এমন কিছু রোগ নিরাময় উপাদান আছে যা শরীরের নানান কঠিন ও জটিল ব্যাধি দূর করার ক্ষমতা আছে, বিশেষ করে অনেক দিন ধরে জমে থাকা সর্দি কাশির মতো রোগকে নিরাময় করতে মধুর গুরত্ব অপরিসীম,
নতুন মধুর চেয়ে পুরনো মধু অর্থাৎ এক বছরের বেশি পুরনো মধু রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে বেশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে;
তাই আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় পুরানো মধুকে বেশি ব্যবহারের কথা বলা হয়ে থাকে;
গিলয়,অ্যাসপারাগাস (শতমূলী), অশ্বগন্ধ্যা, তুলসীপাতার মতো ইত্যাদি আয়ুর্বেদিক ঔষধী গুলো তাজা অবস্থায় আমাদের শরীরে বেশি কাজ দেয়, তাই এজাতীয় ঔষধী পাতা ও গাছ গুলোকে কাঁচা অবস্থাতেই বেশি ব্যাবহার করার কথা আয়ুর্বেদ চিকিৎসা শাস্ত্রে বলা হয়।
রাতে কি ধরনের খাদ্য দ্রব্য না নেয়া উচিৎ
1 পাস্তা:
পাস্তা এমন একটা খাবার যেটি খুব সহজেই এবং অল্প সময়ের মধ্যে তৈরী করা যায়, ফলে বেশির ভাগ লোকই পাস্তা খেয়ে ঘুমাতে চলে যান। পাস্তা র মধ্যে প্রুচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট ও অন্যান্য এমন কয়েকটি উপাদান থাকে যেগুলো শরীর খুব তাড়াতাড়ি পাঁচন করতে পারে না। এর ফলে বদ হজম ও হাইপার এসিডিটির সমস্যা বেড়ে যায়।
2 বেশী মশলা জাতীয় খাবার:
অতিরিক্ত মশলা জাতীয় খাদ্য ও ঝালযুক্ত খাবার আপনি সবার আগে খেলে শরীরে পিত্তি বাড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, যখন লঙ্কা কে অন্য কোনো খাবারের সাথে মেশানো হয় তখন খাবারটি স্বাদ অনেক বেড়ে যায় এবং সুস্বাদু হয়। কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় যদি খাবারের মধ্যে লঙ্কার ব্যবহার করা হয় তবে তা ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে,
3. মিষ্টি খাবার:
যদি ডিনারে মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে পছন্দ করেন তবে তা ত্যাগ করে দিন, কারণ মিষ্টি জাতীয় খাবার শরীরের পক্ষে খুব একটা উপকারী নয় আর এটি দাতের জন্য খুব ক্ষতিকারক, রাতে অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাদ্য গ্রহণে শরীরের ওজন মাত্রাতিরিক্ত বাড়িয়ে তোলে, যা একটি সুস্বাস্থ্য গঠনের জন্য কখনই ঠিক নয়;
4. নুডলস:
নুডলসে অতিরিক্ত মাত্রায় হাই ক্যালরি থাকে, তার সোবার আগে এটি খাওয়া কখনই ঠিক নয়, যদি আপনাকে খুব খিদে পায় তবে এই নুডলস এমন একটি খাবার যা মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে রেডি করে আপনি এটি খাবার টেবিলে নিয়ে চলে আসতে পারবেন, কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে নুডলসে কার্বোহাইড্রেট অত্যধিক মাত্রায় মজুদ থাকে, সোবার আগে এটি খেলে অনেক রকম পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে,
5. ননভেজ জাতীয় খাদ্য:
আমরা জানি ননভেজ খাদ্যের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও আয়রন থাকে, আর এই কারণে রাত্রে যদি ননভেজ খাবার অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া হয় তবে শান্ত ও আরাম দায়ক ঘুম হয় না। ফলে হজমে সমস্যা দেখা দেবে, এবং সকালে ভালো করে পেট পরিষ্কার হবেনা, যার ফলে শরীরে দুর্বলতা দেখা দেবে, তাই রাতে ননভেজ জাতীয় খাদ্য এড়িয়ে চলুন;
6. ফাইবার জাতীয় সবজি
ফাইবার জাতীয় খাদ্য যেমন ফুলকপি, পেঁয়াজ, বাঁধাকপি ইত্যাদি খাদ্য দ্রব্য রাতের খাবারে না রাখাই ভালো। এই জাতীয় সবজিতে ফাইবারের মাত্রা অধিক মাত্রায় খেলে হজমে অনেক সময় লাগে, ফলে পেট ফোলা দেখা দিতে পারে। অনেকক্ষণ পর পর্যন্ত এই খাবার থাকার ফলে ক্ষুদা মন্দা দেখা দেয়;
7. পনির বার্গার:
পনির বার্গার জাতীয় খাবারের মধ্যে রাতে খেলে হজম সহায়তায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে, তাই রাতে এজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
8. স্ন্যাক্স বা চিপস্
এই ধনোরের ফাস্ট ফুডের মধ্যে মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট নামক উপাদন অধিক মাত্রায় থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক, তাই এ জাতীয় খাবার রাতে সোবার আগে আহার করা থেকে বিরত থাকুন;
9. ডার্ক চকোলেট:
ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে ডার্ক চকোলেট খাওয়া উচিৎ নয়, ডার্ক চকোলেটের মধ্যে caffeine (ক্যাফিন) ও অন্যান্য এমন উপাদান থাকে যা হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে তুলতে পারে, যার কারণে ঘুম গভীর হতে বাঁধা সৃষ্টি হতে পারে, যার ফলে মস্তিষ্ক শান্ত হয় না।
10. পিজ্জা:
যদি সবার আগে পিজ্জা জাতীয় খাবার আহার করেন তবে তা পাঁচন তন্তের কার্য ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, ফলে খাবার ভালো করে হজম হতে পারেনা, কারণ এই ধরনের খাবারকে হজম করানোর জন্য পাঁচন তন্ত্রকে অধিক মাত্রায় কাজ করতে হয়, তাই এজাতীয় খাবার যখন রাতে আহার করা হয় তখন আমাদের পাঁচন তন্ত্রকে অনেক বেশি কাজ কাজ করতে হয়। যার কারণে শরীর অসুস্থ হওয়ার সম্ভবনা থেকে যায়;
আরও জেনে নিন
সুগার ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও মুক্তির উপায়
বাদামের উপকারিতা সম্পর্কে কিছু টিপস