মানুষ কেন দুশ্চিন্তা করে এর পেছনে থাকে হাজার কারন। আর আমরা সেটাও জানি আমাদের চিন্তার প্রধান কারণ কোনটা। কি কারণে এত দুশ্চিন্তা। কিন্তু এটা কি ভেবে দেখেছি দুশ্চিন্তা কি তার সমাধান করে দেয়? আসলে এর উত্তর হচ্ছে না। দুশ্চিন্তার কারণে আমাদের মস্তিষ্ক গোলকধাঁধায় পথ হারিয়ে ফেলে। আর এর প্রভাব পড়ে জীবনের অন্য সকল কাজ-কর্মে। সমাজের অনেক কিছু থেকে আমরা আমাদের দুশ্চিন্তার জন্য বিতাড়িত হতে থাকি। যা মনের উপর দারুণ ভাবে প্রভাব ফেলে। তাই আমাদের দুশ্চিন্তার প্রতিকার আমাদের নিজেদেরই করতে হবে।
আসুন জেনে নেই দুশ্চিন্তা এবং হতাশা থেকে মুক্তির কিছু কৌশল
• নিয়মিত ঘুম ও ব্যায়াম: জীবনের সকল কিছুর জন্য যেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে সেটি হলো আপনার মন ও শরীর। কোনো কিছু কাজ প্রস্তুত করতে মন ও শরীর দুটোই সমান গুরুত্ব বহন করে। যেমন একটি শক্তমন একটি দুর্বল শরীরকে টেনে তুলতে পারে না। আবার আপনি যত শক্তিশালী হোন না কেন আপনার মন দুর্বল হলে আপনার জন্য উঠে দাঁড়ানো খুবই কঠিন। তাই পর্যাপ্ত ঘুম ও শরীর চর্চা খুবই জরুরি।
• মানুষের সাথে মিশুন: জীবন অনেক বড় তাই নিজেকে গুটিয়ে রাখবেন না। আপনি যতবেশী মানুষের সাথে মিশবেন আপনার মন তত বড় হবে, মনের সংকীর্ণতা দূর হবে আপনি মানুষকে আরো ভালোভাবে চিনতে পারবেন। একবার ভেবে দেখুন আপনি নিজেকে কেন গুটিয়ে রাখবেন, আসলে কি কোন কারণ আছে ? মানুষের সাথে মিশলে আপনার অভিজ্ঞতা বাড়বে এবং আপনার যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দেয়ার মত ক্ষমতা তৈরি হবে।
• প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যান: মাঝে মাঝে সময় সুযোগ করে বেরিয়ে পড়ুন আপনার জানামতে ভালো কোন জায়গায়। উপভোগ করুন প্রকৃতির বিশালতা। নিজেকে নতুন করে খুঁজে পেতে কোন বিকল্প নেই, যদি সম্ভব হয় যেতে পারেন একদম একা, শুধুই নিজের জন্য। খেয়াল রাখবেন যে আপনি এখানে গিয়েছেন শান্তির জন্য তাই সমস্ত দুশ্চিন্তা মাথা থেকে দূরে রাখবেন যতটা সম্ভব।
• পজিটিভ চিন্তা করুন: মানুষের নিজের চিন্তা ধারা মানুষকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে। আজ আকাশে মেঘ দেখে আপনি ভাবতে পারেন যে আজ দিনটি ভালো যাবে না। কিন্তু আপনিতো এইটাও ভাবতে পারেন যে আজ মজা করে বৃষ্টিতে ভিজবো। আপনাকে শিখতে হবে যে কিভাবে আপনি নিজেকে আরো ভালো রাখতে পারবেন। সব সময় এমন মানুষের সাথে মিশবেন যারা পজিটিভ চিন্তা করে। কারণ এতে আপনার অনেক উপকার হবে। নিজের প্রতি আস্থা রাখুন এবং সাহসের সাথে এগিয়ে যান। আপনার চিন্তা ধারায় আপনাকে রাখবে দুশ্চিন্তা মুক্ত। এত অল্প সময়ে জীবন যদি দুশ্চিন্তা করে বেশিরভাগ সময় নষ্ট করেন তাহলে জীবনটা উপভোগ করবেন কখন! ভালো থাকুন দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন।
• হেঁটে বেড়ান: ঘরে যদি কিছু করার না থাকে তবে মন ভাল করতে হাঁটতে বেরিয়ে যান। বাইরে তাজা হাওয়া আপনার মনকে সতেজ করবে। প্রকৃতি অনেক কিছু সাজিয়ে রেখেছে আমাদের মনোরঞ্জনের জন্য। শুধু দেখার দৃষ্টিভঙ্গি সঠিক স্থানে নিয়োগ করতে হবে। কিছু সময়ের জন্য প্রকৃতির সাথে নিজেকে মিশিয়ে দিতে হবে। দেখবেন মন সুস্থ হয়ে উঠবে।
• বন্ধুদের ফোন করুন: এখন বর্তমান যুগে মনের কথা ওপর জনের কাছে পৌঁছে দেওয়ার নানা মধ্যম এসেছে।খুব সহজেই মনের মধ্যে জমে থাকা কোনো কথা কোনো ভালো মানুষকে জানিয়ে দিতে পৰ যায়। তেমনই একটি মাধ্যম হলো ফোন। আপনার কোনো ভালো বন্ধুদের সঙ্গে ফোনে কথা বলুন তাকে বলুন আপনার কষ্টের কথা পরামর্শ চাইতে পারেন তার কাছ থেকে।
• নতুন কিছু করুন: নেতিবাচক ভাবনা থেকে বেরিয়ে যান নতুন কিছু করুন জিমে ভর্তি হন বা রান্নার ক্লাসে ভর্তি হন। আগামীকাল সকালে উঠে নতুন কি করবেন তার পরিকল্পনা করুন। আর এই নতুন কিছু করার পরিকল্পনা মনকে আলাদা শক্তি জোগাতে সাহায্য করবে। যাতে করে মনের দুর্বলতা দূর হবে আর আস্তে আস্তে হতাশা দূর হতে থাকবে।
• নিজের জন্য সময়: বর্তমান যুগে আমরা অনেক বেশি ব্যাস্ত হয়ে পড়েছি। নিজেকে সময় দেওয়ার মতোও সময়টা যেন আজ হারিয়ে যাচ্ছে দিরে ধীরে।সকল সময় ধরে শুধু ব্যাস্ততা আর দৌড়ঝাঁপে ভরা আজকের জীবন। আসলে এটাই কি আমাদের সুখী জীবন ? আসলে তা কিন্তু না। এক বা দুই মিনিটের জন্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান ডিলিট করে দিন ফেসবুক একাউন্ট আনইন্সটল করে দিন হোয়াটসঅ্যাপ ম্যাসেঞ্জার মেতে উঠুন প্রকৃতির সাথে বা সময় কাটান শিশুদের সাথে দেখবেন ভালো লাগবে।
• গান গাইতে পারেন: দ্রুত মন ভালো করতে গেয়ে উঠতে পারেন পছন্দের কোন গান। গান মন ভালো করার এবং মন থেকে দুশ্চিন্তা দূর করার মহাওসোধী। কথা দিচ্ছি মন ভালো হয়ে যাবে, ইন্টারনেট থেকে কোন লিরিক ডাউনলোড করুন আর বসে গান গাইতে থাকেন। তবে রেকর্ড করতে ভুলবেন না যেন রেকর্ড করুন এবং নিজেই শুনুন। এবং ভুল হলে রিটেক করুন দেখবেন মন ভালো হয়ে যাবে।
• অপরকরে সাহায্য করুন: অনেক সময় এমনও হয় যে সময় কোন কিছুতে মন লাগেনা একা থাকতে ইচ্ছে করে।আর বসে বসে নানা রকম চিন্তা মাথায় আসে। থমকে যেতে থাকে জীবনের ব্যাস্ততায়ভরা জীবনের গতি। এই সময় নিজের জন্য কিছু করতে ভালো লাগেনা। কিন্তু এরকম পরিস্থিতেও আমরা অনেক কিছু করতো পারি যেমন অন্যকে সাহায্য করুন, পরিবারের সদস্যদের কাজে সাহায্য করুন বা বন্ধুদের কাজে সাহায্য করুন। মানে কাজের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন, দেখবেন মন ভালো হয়ে যাবে।
• রান্না করুন: বেশি মন খারাপ লাগলে রান্নাবান্নাও শুরু করতে পারেন। অনেক সময় রান্না বান্না করাও আপনার মেজাজ কে ভাল করে দিতে পারে। অনলাইন থেকে রেসিপি ডাউনলোড করুন আর রাধতে বসে যান আনন্দ পাবেন।
• হাসুন: হয়তো হাসার মতো পরিস্থিতি নেই তবু চেষ্টা করুন হাসর। হাসি কখনো কখনো চাপ কমাতে সাহায্য করে, মেজাজ ভালো রাখে, বিষন্নতা কেউও দূরে রাখে, তাই হাসুন। হাসি না আসলে কোন কমেডি দেখুন অটোমেটিক হাসি পাবে এবং মন ভালো হয়ে যাবে। এছাড়াও হাসি মানুষের জীবনের একটি বড়ো অংশ। নিজেকে খুশি রাখতে জীবনের হাসিটুকু অত্যন্ত জরুরি। আর বিশেষজ্ঞরাও বলেন হাসলে আমাদের হার্টের প্রবলেম দুর করতে সহায়তা করে। তাই প্রতিদিন কিছু না কিছু কারণে হাসি অত্যন্ত জরুরি। এতে মন ও শরীর উভয় ভালো থাকে।
• নিজের প্রতি বিশ্বাস: আমরা অনেক সময় নিজের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলি। আমাদের জীবনে কোনো সমস্যা আসলে ভবি আর মনে হয় আগের মিত ভালো হবে না। কিন্তুু বাস্তবে তা নোয়। জীবনে খারাপ এবং ভালো একে অপরের সাথে জড়িত। তাই জীবনে যতোই খারাপ আসুক না কেন। নিজের উপর নিজেকে বিশ্বাস রাখতে হবে। সব সময় পজিটিভ চিন্তা রাখতে হবে, তাই ভাবতে হবে সব ঠিক হয়ে যাবে যদিও খুব চাপের সময়ে ভাবনাটি সহজেই আসবেনা। তবুও ভবন সব ঠিক হয়ে যাবে যা হয়েছে হয়েছে যেটা হয়েছে ভালোর জন্যই হয়েছে আর নতুনভাবে দিন শুরু করুন। অটোমেটিক মন ভালো হয়ে যাবে।
Comments are closed.