আপনার মুখে কি ব্রণের দাগ আছে ? আর যার কারণে ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে আসছে এই ব্রণের দাগের সমস্যায় ভুগছেন দীর্ঘ দিন ধরে। আজ এবিষয়ে কিছু ঘরোয়া বিউটি টিপস এবং পদ্ধতি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। যেগুলো প্রচুর মানুষের জীবনের দৈনন্দিন সমস্যা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা। এই টিপস গুলি আপনার ত্বককে করে তুলবে দাগ মুক্ত উজ্জ্বল আর চকচকে।
উজ্জ্বল ও ব্রণের দাগ মুক্ত ত্বক |
ব্রনের দাগ তোলার উপায়
নিজের গ্লোয়িং স্কিন মেন্টেন রাখা ডাল পড়া স্কিন কারই বা পছন্দের। মুখে প্রকাশ না করলেও মনে মনে কিন্তু সবাই চাই একটা সুন্দর গ্লোয়িং স্কিন এর অধিকারী হতে। ছেলেদের কাছে এটা খুব একটা ইমপোরটেন্ট না হলেও মেয়েদের কাছে এটা কিন্তু তাদের স্কিনের গ্লোটা অনেক বেশি ইম্পর্টেন্ট রাখে। কিন্তু প্রতি মাসে কসমেটিকস এর পিছনে এত এত টাকা খরচ করার পরও যদি মনের মতো গ্লোয়িং ও উজ্জ্বল স্কিন না পাওয়া যায়, তাহলে ব্যাপারটা সত্যি খারাপ লাগে। তাই আজ আপনার সাথে এরকম কিছু সিম্পল এবং ঘরোয়া টিপস শেয়ার করব, যেগুলো ব্যবহার করে আপনি সহজেই খুব সামান্য খরচে পেতে পারেন আপনার মনের মতো গ্লোয়িং স্কিন।তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
ঘরোয়া পদ্ধতি ১ – Water (জল):
স্কিনের সুন্দর্য বজায় রাখার জন্য যদি সব থেকে ইম্পর্টেন্ট কিছু থেকে থাকে তাহলে সেটা হলো প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়া। প্রতিদিন অন্তত আট গ্লাস করে জল খেলে আপনাদের শরীর এবং স্কিন থেকে টক্সিন গুলো বেরিয়ে যাবে। আমাদের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ওয়াটার সেলস এবং অন্যান্য অর্গান সহ পুরোটাই জলে পরিপূর্ণ। পুরুষদের প্রতিদিন দিনে ৩ লিটার আর মহিলাদের দিনে ২.২ লিটার জল খাওয়া উচিত। স্কিনের মইশ্চারাইজ মেনটেন করার জন্য আর স্কিন সেলস গুলোতে প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট ডেলিভার করার জন্য অত্যন্ত জল প্রয়োজনীয়।
জল স্কিনের ফ্লেক্সিবিলিটি ও বাড়াতে সাহায্য করে প্রতিদিন ঠিকমতো জল খাওয়া হলে চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ গুলো যেমন রিংকেলস ফাইন লাইনস এগুলো সহজে আসে না। জল স্কিনকে ভালভাবে হাইড্রেটেড্রেটেড রাখতে আর স্কিন কে গ্লোসি রাখতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়ার ফলে স্কিন কমল আর সুন্দর হয় যেটা অন্যান্য সাময়িক ক্রিম এপ্লাই করার থেকে অনেক বেশি ইম্পর্টেন্ট। তাই যদি আপনিও সুন্দর কোমল আর গ্লোয়িং স্কিনের অধিকারী হতে চান তাহলে প্রতিদিন নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন।
ঘরোয়া পদ্ধতি ২ – Yoga (ব্যায়াম):
আমরা সবাই জানি ইয়োগা করলে শরীর ও মন দুই ভালো থাকে। ঠিক তেমনি আপনি কি জানেন ইয়োগা আপনাদের শরীরের ত্বকের জন্য ভীষণ ভাবে কার্যকরী একটি উপায়। ইয়োগা করলে ন্যাচারালি আপনার স্কিনে একটা গ্লোয়িং ভাব আসবে আর তাতে আপনাকে দেখতে আরো বেশি ইয়ং লাগবে। আর আপনি হেলথিও থাকবেন। যার ফলে বুঝতেই পারছেন অভার অলই আপনাকে দেখতে খুব সুন্দর লাগবে।
ইয়োগা আমাদের শরীরে ব্লাড সার্কুলেশন বাড়াতে সাহায্য করে। আর শরীরের যত দূষিত জিনিস বা টক্সিনস আছে সেগুলো কে রিডিউস করতে সাহায্য করে। এমন অনেক ফিমেল আছেন যাদের অয়েলি স্কিন, যার ফলে তাদের গরমে অনেক প্রবলেম ফেস করতে হয়। স্পেশালি তারা কুলিং প্রাণায়াম বা ব্রিদিং এক্সারসাইজ গুলো রয়েছে সেটা যদি তারা করতে পারেন তাহলে আপনাদের স্কিনে গ্লো নিয়ে আসতে অনেকটা হেল্প হতে পারে।
কপালভাতি প্রাণায়াম স্কিনের গ্লো এবং উজ্জ্বলতা মেন্টেন রাখার জন্য খুবই উপকারী। এতে ডিটক্সিফিকেশন ঘটে যার ফলে ন্যাচারালি গ্লোইং স্কিন পাওয়া যায়।এছাড়া আপনি যদি বাড়িতে বসে প্রতিদিন কুড়ি মিনিট করে ফেসিয়াল ইয়োগা এক্সেসাইজ করেন তাহলে আপনি খুব তাড়াতাড়ি এর রেজাল্ট পাবেন। যেমন যদি আপনি আপনার মুখটা কে কুড়ি মিনিট আস্তে আস্তে মাসাজ করেন তাহলে আপনার কিছুটা স্ট্রেস রিডিউস হবে। আপনি যদি আপনার ভ্রূু গুলোকে যদি একইভাবে মাসাজ করেন তাহলে কিছুক্ষণের জন্য আপনার মধ্যে রিলাক্সেশন আসবে। এবং আপনার স্কিনে ইনস্ট্যান্ট একটা সৌন্দর্য ভাব নিয়ে আসবে।
ঘরোয়া পদ্ধতি ৩: ন্যাচারাল ফেসিয়াল প্যাক
নাম্বার ১ : ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিছু ফেসিয়াল প্যাক আছে যা সহজেই আমরা ইউজ করতে পারি। যেমন তাদের মধ্যে নাম্বার ওয়ান কলা। স্কিনের জন্য কলা খুবই উপকারী। এর জন্য আপনাকে যা করে হবে তা হলো প্রথমে মুখটাকে জলে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর একটা পাকা কলার পেস্ট মত বানিয়ে তাতে এক চামচ মধু দিয়ে মিক্স করে মুখে মাখুন। আর শুকিয়ে গেলে কোন নরমাল জলে ধুয়ে ফেলুন।
এতে আপনার স্কিন সফট আর গ্লোইং হবে। এটা আপনি প্রতিদিন একবার করে মাখুন। এটা খুবই সহজ একটা উপায়। আর প্রতিদিন এটা লাগালে কিছুদিন পরেই আপনি তার রেজাল্ট দেখতে পাবে। আপনি চাইলে এই মিশ্রণটির মধ্যে এক থেকে দুই চামচ লেবুর রসও দিতে পারেন। এছাড়া আপনি চাইলে রোজ সকালে খালি পেটে পাকা কলা খেতে পারেন। এটাও আপনার শরীর এবং স্কিনের জন্য খুব উপকারী। কলার মধ্যে পটাশিয়াম আর ভিটামিন এ. এবং সি. রয়েছে। যেটা স্ক্রিন পরিষ্কার করে স্কিনের গ্লোভাব আনতে সাহায্য করে। আর মধুতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যার ফলে স্কিন নরমও হয়।
নাম্বার ২ : এখন যে প্যাকটির বিষয়ে জানবো সেটা স্পেশালি ছেলেদের জন্য। যদিও ছেলে এবং মেয়ে উভয়ই ইউজ করতে পারে। যাদের অয়েলি স্কিন, যাদের স্কিনে স্পট বা দাগ আছে, ট্যাম আছে তাদের জন্য এই প্যাকটা বিশেষ উপকারী। দু চামচ চালের গুঁড়ো আধা চামচ হলুদ গুঁড়ো চার চামচ লেবুর রস মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিন। এরপর পেস্টটাকে মুখে ঘাড়ে হাতে ও পায়ে লাগান। এরপর শুকিয়ে গেলে একটু জল নিয়ে সেটাকে স্ক্রাব করতে করতে অর্থাৎ সার্কুলার মোসনে দলতে দলতে নর্মাল জলে ধুয়ে ফেলুন।
এটা আপনার স্কিন কে নরম আর সুন্দর বানাবে আর ট্যান রিমুভ করবে। ছেলেদের স্কিন যেহেতু মেয়েদের স্ক্রিনের তুলনায় একটু হার্ড তাই এই প্যাকটা স্পেশালি তাদের জন্য ভালো হবে। এটা আপনি প্রতিদিনও লাগাতে পারেন বা সপ্তাহে দু-তিন দিন ও লাগাতে পারেন। হলুদ আমাদের স্ক্রিনের পিগমেন্টেশন অর্থাৎ আমাদের স্কিনে যে ট্যান ভাব থাকে সেটাকে রিমুভ করে স্কিনের যে আসল রং সেটা কি ফুটিয়ে তোলে, আর স্কিনকে গ্লোয়িং করে তোলে। চালের গুঁড়ো আমাদের ডেথ স্কিন গুলো কে দূর করে স্কিন টাকে নরম আর সুন্দর বানায়।
নাম্বার ৩ : এর পরের যে প্যাকটা সেটাও খুব উপকারী। এই প্যাকটা বানানোর জন্য দু চামচ বেসন, তার মধ্যে হাফ চামচেরও একটু কম হলুদ গুঁড়ো, তার মধ্যে এক চামচ চন্দনের গুরু এবং দু চামচ কাঁচা দুধ আর শেষে পরিমাণমতো রোজ ওয়াটার দিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিন। পেস্ট টা বেশি পাতলাও না বা বেশি ঘনও না মোটামুটি পেস্ট বাড়ানোর জন্য যেটুকু গোলাপ জল লাগে সেই মতো পেস্ট বানিয়ে নিন। এবং একমাস অব্দি প্রতিদিন মাখুন। আর পেস্টটা লাগিয়ে কুড়ি থেকে ত্রিশ মিনিট অব্দি অপেক্ষা করুন। এরপর শুকিয়ে গেলে একটু জল নিয়ে সার্কুলার মোশন স্ক্রাব করে ধুয়ে ফেলুন।
আপনি চাইলে এটা মুখ গলা ঘাড় বা পুরো বডিতে ও লাগাতে পারেন। এতে ব্যাসন আছে যেটা সব রকম স্কিন এর জন্যই ভালো। কারণ এটা ডার্ক স্পট-গুলোকে ভিতর থেকে পরিষ্কার করে। আর হলুদে ব্রণও কমে এছাড়া কাঁচা দুধের ল্যাকটিক এসিড থাকে যেটা স্কিনের ট্যাম রিমুভ করে উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। আর চন্দনএর গুরো ডাক স্পটগুলোকে দূর করে যার ফলে স্ক্রিনটা শুধুমাত্র সুন্দরই নয় তার সাথে সাথে স্কিনে একটা গ্লোইং এবং উজ্জ্বল ভাব চলে আসে।
নাম্বার ৪ : “অ্যালোভেরা জেল”- যাদের ড্রাই স্কিন তাদের জন্য অ্যালোভেরা জেল খুবই উপকারী। অনেকের বাড়িতেই অ্যালোভেরা গাছ থাকে আর নাহলে বাজারেও সহজে অ্যালোভেরা পাওয়া যায়। তাই অ্যালোভেরা এটা খুব উপকারী একটা ঘরোয়া উপায় বলা চালে। অ্যালোভেরাকে স্লাইড করে কেটে তার ভেতরের জুশ গুলোকে বার করে ভালোভাবে মুখে লাগান। তারপর সেটা শুকানো হওয়া অব্দি ওয়েট করুন। শুকিয়ে গেলে তারপর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এটা যাদের ড্রাই স্কিন তাদের জন্য ভীষণ উপকারী আর এটা প্রতিদিন লাগালে স্কিনে গ্লো আসবে।
অ্যালোভেরাতে ভিটামিন সি. ই. এবং বিটা ক্যারোটিন থাকে যেটা স্কিনকে ময়শ্চারাইজ করে। আর যদি পিওর অ্যালোভেরা পেতে সমস্যা হয় তাহলে অ্যালোভেরা জেলও ইউজ করতে পারেন যেটা মার্কেটে সহজেই এভেলেবেল আছে। অ্যালোভেরা জেল রোজ রাতে শোয়ার আগে লাগিয়ে ঘুমালে প্রতিদিন সকালে স্কিনটা অনেকটা পরিষ্কার লাগে, আর একটা ইনস্ট্যান্ট গ্লো ভাব আসে। এছাড়াও আরেকটা উপায় রয়েছে মুলতানি মাটি যেটা কম বেশি আমরা সবাই প্রায় জানি স্কিন নরম আর ব্রণ রিমুভ করতে খুবই উপকারী।
ঘরোয়া পদ্ধতি ৪ : ন্যাচারাল স্ক্রাব
নাম্বার ১ টমেটো স্ক্রাব : টমেটো স্ক্রাব এটা খুব সহজ একটা ঘরোয়া পদ্ধতি আর এটা ছেলেরাও ইউজ করতে পারে। যেহেতু ছেলেদের স্কিন মেয়েদের তুলনায় অয়েলি আর হার্ড হয় তাই এটা ছেলেদের জন্যও খুবই উপকারী। একটা টমেটো নিয়ে সেটার থেকে রস বের করে নিতে হবে এরপর তার মধ্যে এক চামচ মধু দিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। এরপর মুখে ঘাড়ে গলায় বা পুরো বডিতেও আপনি এটা ব্যবহার পারেন। এবার শুকিয়ে গেলে একটু জল নিয়ে স্কাপ করে তারপর হালকা গরম জলে ধুয়ে ফেলতে হবে।
নম্বর ২ লেমন স্ক্রাব: এই স্ক্রাবটি স্পেশালি স্কিনের ট্যান রিমুভ এর জন্য ব্যবহার করা হয়। এতে স্কিন ট্যান-ফ্রী আর উজ্জ্বল থাকে। একটা পাতিলেবু নিতে হবে আর তাতে অল্প পরিমাণে নুন দিতে হবে। যদি আপনার ফুল বডিতে ট্যান থাকে সেই পরিমাণ মতো আপনি নেবেন। পাতিলেবুর রসটা বের করে একদম সামান্য নুনের মধ্যে সেটা মিশিয়ে ফুল বডি বা হাতে পায়ে সার্কুলার মোশনে লাগাতে হবে। লেবুর রস আর নুন যে পোড়া চামড়া আর ডেথস্কিন সেলস গুলো থাকে সেগুলোকে ট্যান-ফ্রী এবং পরিষ্কার ও সুন্দর করে। আপনি এটা প্রতিদিন ইউজ করতে পারে স্ক্রাব টা লাগানো হয়ে গেলে সেটাকে সকালের জন্য রেখে দিন। এবং এরপর শুকিয়ে গেলে সেটা ধুয়ে ফেলুন।
এখানে যতগুলো ফেসিয়াল প্যাক বা স্ক্রাব এর কথা বলা হইছে, সবগুলোই ছেলে মেয়ে উভয়ই মাখতে পারে। আর খুব সহজে এগুলোকে ঘরোয়া ভাবে বা বাজার থেকে অল্প কিছু জিনিস কিনে নিয়ে বানানো যায়। আর এগুলো একদম পিওর ন্যাচারাল এতে কোনো ক্ষতিকর কেমিক্যাল নেই। আপনি এগুলোর মধ্যে পছন্দমত প্যাক আর স্ক্রাব চুস করে এপ্লাই করতে পারেন। স্ক্রাব এবং প্যাক দুটোই স্কিন ক্লিয়ার এবং পরিষ্কার করার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী।
এ ছাড়াও আরো যেসব কারণের জন্য ব্রণ হয় তার মধ্যে একটা হলো প্রচুর পরিমাণে ফাস্টফুড আর স্পাইসি খাবার খাওয়া। যেগুলো আমাদের স্ক্রিন এবং শরীররে মারাত্মকভাবে ক্ষতি করে। অত্যাধিক ফাস্টফুড খাওয়ার ফলে স্কিনের ডেথ সেলস গুলোর ছিদ্র একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে প্রোটিন ও সিবম গুলো জমে যেতে থাকে এবং এর ফলে স্কিন অয়েলি হতে থাকে। আর তখন স্কিনের ভিতরে ব্যাকটেরিয়া জমে স্কিনে ব্ল্যাকহেডস আর পিম্পল তৈরি হয়ে যায়। তাই যতটা পারা যায় ফাস্টফুড এভোয়েড করাই ভালো।
এই সমস্ত ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো ফলো করলে ছেলে মেয়ে উভয়ের স্কিন পরিষ্কার সফট আর গ্লোয়িং হয়ে উঠবে। যেটা প্রকৃতপক্ষে কনফিডেন্স টাকে বুষ্ট করতে অনেকটা সাহায্য করবে।
Comments are closed.