অভ্যাস যেটা তোমাকে গড়তেও পারে আবার ভাঙ্গতেও পারে। কথায় আছে মানুষ অভ্যাসের দাস। সেটা হতে পারে ভালো কিছুর জন্য অথবা খারাপ কিছুর জন্য। আমরা প্রতিদিন যে সব কাজকর্ম করি তা আমাদের অভ্যাস এর জন্যই সম্ভব। আজকের একটা ছোট অভ্যাস আগামী দিনে বিশাল একটা পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারে।
একদিকে তুমি চ্যাম্পি়নদের মতো লাইফ স্টাইল চাও আবার অন্যদিকে তুমি অনুসরণ করছ কিছু লুজারদের মতো অভ্যাস জেনে অথবা না জেনে। তোমার কি মনে হয় একজন চ্যাম্পিয়ন চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তার চারপাশে লুজারদের অনুসরণ করে। নাকি তুমি ভাবছো একজন চ্যাম্পিয়ান প্রতিদিন ঘুম থেকে দেরি করে উঠে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ইন্টারনেটে কাটিয়ে, পছন্দের কিছু টিভি শো দেখে, কিছু ভুলভাল লোকজনের সাথে আড্ডা মেরে, তর্ক করে, দিনের শেষে আবার পরের দিনই শুরু করার মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঘুমোতে যাওয়ার পর চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এই সমস্ত অধ্যায় অনুসরণ করে দুনিয়ার কোন ব্যক্তি কোন দিন চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি আর পারবেও না। এ সমস্ত অভ্যাস গুলো তোমাকে পুরোপুরি লুজার বানানোর জন্য যথেষ্ট।
এখন যদি তুমি দশটা লুজারদের কাছে জানতে চাও কোনো চ্যাম্পিয়ন এর ব্যাপারে, তারা তোমাকে বলবে উনিতো ভীষণ লাকি তাই ওই জায়গায় পৌঁছতে পেরেছে। এবার তুমি ভেবে দ্যাখো কোনটা সঠিক একদিকে 100 জনের মধ্যে একটা মানুষ তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য দিনের পর দিন কিছু ভালো অভ্যাস অনুসরণ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। আর ঠিক একই সময়ে অন্যদিকে বাকি নিরানব্বই ভাগ মানুষ তখন অন্য কিছু নিয়ে সমালোচনায় ব্যস্ত। তারপর হঠাৎ করে একদিন ওই একজন মানুষটি যখন তার লক্ষ্যে পৌঁছে গেলেন তিনি তখন হয়ে ওঠেন একজন লাকি ব্যক্তি। তুমিও হয়ে উঠতে পারো সেই লাকী ব্যক্তি। তুমি আজ থেকেই চেষ্টা করতে থাক নতুন কিছু অভ্যাস রপ্ত করার ওই একজনের মধ্যে। আবার এখন যদি তুমি ভেবে থাকো কালকে থেকে শুরু করবে, তাহলে ওই ভাবনাটাও তোমার অভ্যাসে পরিণত হবে, আর প্রত্যেকদিন তুমি ওই একি ভাবেই নিজের কাছে কাল থেকে শুরু করার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি করতে বাধ্য হবে।
তোমার প্রচুর সমস্যা থাকতে পারে আজ থেকে শুরু না করবার। কিন্তুু শুরুতো তোমাকে করতেই হবে নাহলে তুমি যা চাইছ সেটা অর্জন করবে কিভাবে! তুমি পেতে চাইছ সম্পূর্ণ কিছু আলাদা আজকের তুলনায় অথচ অনুসরণ করছ সেই অভ্যাস যেটা গতকাল করে এসেছো। তাহলে আলাদা কিছু ঘটবে কিভাবে!
এটা কতোটা অবাস্তব একবার ভেবে দেখো তুমি ওঠতে চাইছো পাহাড়ের সর্বোচ্চ চুড়ায় অথচ চলতে থাকছো সমুদ্রের দিকে। কষ্ট দুক্ষেত্রেই আছে কিন্তুু ওই কষ্টে ভোগা করাটাকে তুমি পছন্দ করছ জেনে অথবা না জেনে। অভ্যাস এক ধরনের ভাইরাস এটাকে যত বেশি তুমি অনুসরণ করবে প্রাধান্য দেবে এটা তোমাকে সেইভাবে চলতে বাধ্য করবে। এবার এই অভ্যেস ভাইরাসকে একমাত্র তুমিই চাইলে তোমার অ্যান্টিভাইরাসে রূপান্তরিত করতে পারবে। তুমিই এখনি চাইলেই দৌড়ে আসতে পারো আবার ঘরে বসে টিভি দেখতেও পারা। তুমি চাইলেই সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারো আবার ঘুমিয়ে থাকতেও পারো, শুধু একটা কথা মনে রাখতে হবে আজকের এই ছোট ছোট অপছন্দগুলো আগামী দিনে বিশাল পার্থক্যে সৃষ্টি করবে।
এবার তোমার পছন্দ যদি তোমার চারপাশের মানুষগুলোর মত হয় তাহলে তোমার অভ্যাসগুলো ওদের মতো হবে। আজকে যদি তুমি সঠিক পরিকল্পনা না কর কালকে তুমি কখনোই সঠিকভাবে চলতে পারবে না। প্রত্যেক সফল ব্যক্তিরা আগের থেকেই পরিকল্পনা করে রাখেন, যে আজকে তিনি কি করতে চলেছেন। তোমাকেও ঠিক একইভাবে আজকে পরিকল্পনা করতে হবে। কোন কোন অপ্রয়োজনীয় অভ্যাসগুলো তুমি পরিবর্তন করবে। আর কোন কোন প্রয়োজনীয় অভ্যাসগুলোকে ধরে রাখেবে। এই পরিকল্পনার পরেই তুমি সঠিকভাবে চেষ্টা শুরু করতে পারবে। আর ধীরে ধীরে যখন তোমার এই চেষ্টা সফল হতে শুরু করবে, তখনই তুমি পার্থক্য অনুভব করতে পারেবে।
ভালো লাইফ আসলে আর কিছুই নয় শুধুমাত্র ভালো কিছু অভ্যাসের ফলাফল। আর তুমি যদি সত্যি সত্যি পরিবর্তিত হতে চাও, তাহলে এখন থেকে একটু একটু করে পরিবর্তিত হও, পরিস্থিতি তোমার খারাপ হতেই পারে কিন্তু তাতে কি তোমাকে তো কেউ আটকে রাখেনি। পৃথিবীর এমন হাজার নজির আছে যারা হয়তো তোমার থেকে অনেক খারাপ পরিস্থিতি থেকে শুরু করে এখন অনেক ভালো এবং বড় জায়গায় পৌঁছে গেছে।
এপিজে আবদুল কালাম, স্টিভ জবস এনারা কিন্তু খুব বড় জায়গা থেকে শুরু করেন নি। তাহলে এনারা যদি করতে পারেন তাহলে তুমি কেন পারবে না তুমি চাইলেই শুরু করতে পারো। তোমাকে আজ থেকেই ভেবেনিতে হবে তোমার অভ্যাস বদলানোর ক্ষমতা এই পৃথিবীতে শুধুমাত্র একজনেরই আছে সেটা একমাত্র এবং শুধুমাত্র তুমি।
তুমি চাইলেই আজ থেকে পুরনো অভ্যাস গুলোকে ত্যাগ করে ধিরে ধিরে নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে পার। দু বছর পাঁচ বছর দশ বছর পর কিন্তুু তুমি যখন পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছে যাবে, তখন তুমি বুঝতে পারবে আজকের এই একটা ছোট্ট পদক্ষেপ তোমার জীবনে কত গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে সাহায্য করেছে। সুতরাং তোমার এখনকার একটা ছোট্ট পছন্দই কিন্তু সবকিছু যেটা তোমার অভ্যাস বদলাতে সাহায্য করে। আর অভ্যাস হলো এমন কিছু যেটা তোমাকে গড়তেও পারে আবার ভাঙ্গতেও পারে। কথায় আছে মানুষের জীবনের সাকসেস এবং ফেলিওর দুটো দিকিই অভ্যাসের উপর নির্ভর করে।
কিভাবে অভ্যাস পরিবর্তন করবেন – How To Change The Habits
তুমি যদি ভালো অভ্যাস গড়তে চাও তাহলে প্রথমে জানতে হবে ভালো অভ্যাস কি ভাবে তৈরী হয়? ভালো অভ্যাস তৈরি করার জন্য তিনটি পদ্ধতি রয়েছে যেমন প্রথমটি হলো ইঙ্গিত, আচরণ বা কাজের ধরন, দ্বিতীয়টি নিয়মিত কাজকর্মের সূচি আর তৃতীয় টি হলো উপায়ন।
- ইঙ্গিত বা ট্রিগার : ইঙ্গিত হলো সেই পদ্ধতি যেটি ভালো এবং খারাপ অভ্যাস গড়ে তুলতে প্রেরণা যোগায়। যেমনঃ বেশির ভাগ মানুষ তারা স্মোকিং করে বন্ধুদের অনুরোধে। সেই সময় তারা এটা মনে করে যে এটা একমাত্র টাইম পাশের জন্য এবং এক সময় তা ছেড়ে দেবে। শুরুতে দেখা যায় বন্ধুরা ডেকে নিত এবং একসময় এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে বন্ধুদের সে নিজে ডেকে আনছে। এখানে তার বন্ধুরা তার জন্য ইঙ্গিত বা ট্রিগার হয়ে যায়। কেননা সে তার বন্ধুদেরকে দেখলেই এখন তার স্মোকিং করতে মন চায়। ইঙ্গিত আলাদা আলাদা হয় কিন্তুু সব ইঙ্গিত বা ট্রিগার পাঁচটি ক্যাটাগরির মধ্যে আসে প্রথম হলো লোকেশন, দ্বিতীয় হলো সময়, তৃতীয় হলো ইমোশন যেমন হ্যাপি, স্যাড, চতুর্থ হলো আদার্স যেমন অন্য ব্যাক্তির কারণে, আর পঞ্চম হলো লাস্ট অ্যাকশন।
- রুটিন বা নিত্যনৈমিত্তিক কাজ: রুটিন ছোট থেকে বড় হতে পারে। উদাহরণঃ আপনার বন্ধুর সাথে দেখা হওয়ার পর একটা শপে যাওয়া এবং ওখান থেকে সিগারেট ক্রয় করে আনা। পর লাইটিং করানো এই টোটাল পর্যায়টা রুটিং আর আওতায় পরে।
- উপায়ন বা রিওয়ার্ড : রেওয়ার্ড হলো সবচেয়ে ইম্পর্টেন্ট। যেমনঃ মানুষ যখন স্মোকিং করে তখন তার সিগারেটের মধ্যে নিকোটিন থাকে। আর এই নিকোটিন টা হলো তার জন্য প্রিয়। যা মানুষকে অনেক ভালো অনুভব করায়।
এভাবেই ভালো ও খারাপ অভ্যাসের তিনটি পর্যায়ের মধ্যে পড়ে। এই তিনটি পর্যায় যখন বার বার কমপ্লিট হয়ে রিপিট হয় তখন এটি আরও শক্তশালী হতে থাকে। সেটা হতে পারে খারাপ অভ্যাস নাহলে ভালো অভ্যাস।
এখন আমরা ফিরে আসি মূল বিষয়ে। জানা যাক কিভাবে খারাপ অভ্যাস গুলোকে পরিবর্তন করে ভালো অভ্যাসের রুপান্তর করা যায়।
হঠাৎ করে অভ্যাস পরিবর্তন করা সম্ভব নই। কেননা অভ্যাসের অনেক প্লেট আমাদের ব্রেইনের মধ্যে ডিপ্লেক্স হয়ে থাকে। এগুলি এতো স্ট্রং থাকে যে এগুলোকে নিমেষে সরিয়ে ফেলা কষ্টকর হয়ে যায়। এ জন্য দেখা যায় মানুষ কোনো পুরনো অভ্যাস পরিবর্তন করানোর জন্য অনেক চেষ্টা করে। অনেক সময় দেখা যায় সে নিজের উপর কন্ট্রোল ও করে। কিন্তুু কিছুদিন যাওয়ার পর আবার পুরনো ফর্মে ফিরে আসে। এজন্য এটাকে সরানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো পুরনো অভ্যাসের সাথে নতুন অভ্যাসকে রিপ্লেকস করা।
উদাহরণঃ একট মানুষ কোনো একটা জিনিষ খেতেন দীর্ঘদিন খাওয়ার পর তিনি অনুভব করলেন তিনি আন হেলদি হয়ে পড়েছেন। তখনই সে চিন্তা করলো তার খারাপ অভ্যাস গুলো সে পরিবর্তন করবে। এই সময় তার এক বন্ধু তাকে একটা বুক রেকমেন্ড করলো। সে সম্পুর্ণ বইটি পড়লো এবং তার নিজের উপর তা এপ্লাই করা শুরু করে দিলো। পরে সে দেখলো এই তিনটি অভ্যাসের মধ্যে তার কি সামঞ্জস্যতা।
সে জানতে পারে যে সেম টাইমে তার ওই দ্রব্যটা খেতে ইচ্ছে করছে যেটি খাওয়ার জন্য সে আনহেলদি হয়ে পরেছে। তখন তার বুঝে নিতে অসুবিধা হলোনা এই “টাইমটা তার জন্য ট্রিগার বা ইঙ্গিত ছিল”। এর পর তার রুটিন বের করতে বেশি সময় গেলনা। এটা ত্যাগ করার পর সে বোরিং অনুভব করতো। এর পর সে ওই বইয়ের ২য় এবং লাস্ট প্রসেসটি স্টার্ট করলো। পর দিন সেম টাইমে যখনই তার ওই দ্রব্য খেতে মন ছেয়েছিলো তখনই সে ওই দ্রব্যের বদলে অন্য কিছু কিনলো এবং তা খেতে শুরু করলো। এবং তার পড়ের দিনও একি পন্থা অবলম্বন করলো। আবার তার পরের দিন ঠিক একই সময়ে সে দোকানে গেল এবং একই উপায় অবলম্বন করলো। চরতুর্থ দিন সে আবার গেলো কিন্তুু কিছু ক্রয় করলনা। এবং বন্ধু দের সাথে গল্পে শামিল হয়ে গেলো। এভাবে সে কিছু দিন করলো। সে শুধু রুন্টিন এবং রিওয়ার্ড কে অন্য রুটিন এবং রিওয়ার্ড এর সাথে বদলে দিল। এবং এক নতুন অভ্যাস গঠন করলো। এবং নিজেকে হেলদি অনুভব করতে লাগলো। এরকম করে তুমিও জীবনে অনেক পরিবর্তন সাধন করতে পারবে। শুধু নিজেকে একটু সঠিক ভাবে ভাবতে হবে।
এরকম আরো bangla motivational tips পেতে আমাদের সাথে থাকুন। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এটাই আমাদের একান্ত কাম্য।
Comments are closed.