আসুন জেনে নেই একমুঠো বাদামের উপকারিতা ও কি কি উপাদান থাকে বাদামের মধ্যে
হার্ট অ্যাটাক থেকে মুক্তি: একটি রিসার্চ অনুযায়ী জানা গেছে যে ব্যাক্তি সপ্তাহে পাঁচদিন বাদাম খাবেন ওই ব্যক্তির হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবনা ৫০% কমে যেতে পারে। বাদাম কোলেস্টরল কম করে, রক্তে উপস্থিত কোলেস্টরলের লেবেল বাদাম খেলে হ্রাস পায়।
হাড় এবং দাঁত শক্ত করতে বাদাম: বাদামের মধ্যে থাকা ফসফরাস হাড় এবং দাঁতকে মজবুত করতে সাহায্য করে।
শরীরের ওজন বজায় রাখতে বাদাম: একটি পরীক্ষা থেকে জানা গেছে যে ব্যাক্তি বাদাম খায় তার তুলনায় যে বাদাম খায়না তার ওজন কম এবং বাদাম খেলে শরীরে ফ্যাটের হ্রাস হয়। তাই খাবার তালিকায় বাদাম রাখতে পারেন এতে শরীরের ওজন সঠিক থাকবে।
ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি: রোজ বাদাম সেবন করলে ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এবং ইনসুলিনের প্রয়োজন পড়ে না।
স্মৃতি-শক্তি বৃদ্ধি করতে বাদামের উপকারিতা: বাদাম খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। রোজ সকালে ২ থেকে ৩ টি বাদাম জলে ভিজিয়ে সেবন করলে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে মনে রাখার ক্ষমতা ধরে রখতে সহায়তা করে।
ব্লাড প্রেসার কন্ট্রোল: বাদাম ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। বাদমে থাকা উপাদান ম্যাগনেসিয়াম ব্লাডপ্রেসার কমাতে সাহায্য করে। দীর্ঘদিন ধরে ব্লাডপ্রেসারের সমস্যা থাকলে বাদাম খাওয়া শুরু করতে পারেন। ভালো ফল মিলবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বাদাম: বাদাম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন জর, সর্দি, কাশি প্রভৃতি সাধারণ ব্যাধি গুলির হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে। বাদাম খেলে আমাদের শরীরের প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে। যদি আপনি কফের সমস্যায় ভোগেন গরম দুধে ২টি বাদামের দানার পেস্ট বানিয়ে দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন।
হজমশক্তি বৃদ্ধি ও পাচন পক্রিয়া সঠিক রাখতে: বাদাম পাচনতন্ত্রের কাজে সাহায্য করে। যদি আপনার পেট হজমে সমস্যা করে তবে অল্প পরিমাণ বাদাম সেবন করুন সমস্যা দূর হবে।
গর্ভবতী মহিলার স্বাস্থ্য: বাদাম গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সহায়তা করে। এতে বাচ্চা এবং মা উভয়ই সুস্বাস্থের অধিকার লাভ করবে।
অনিচ্ছাকৃত ক্ষুধা: বাদাম খিদের সমস্যা দূর করতে খাওয়া যেতে পারে। বাদামে থাকা ফাইবার খিদেকে কন্ট্রোল করতে সহায়তা করে।
স্কিনের জন্য বাদাম: বাদাম আমাদের শরীরের চামড়ার জন্যও খুব উপকারী। এর কিছু উপকারী টিপস জেনে নিন যা আপনার কাজে আসবে।
ড্রাক সার্কেল কমাতে বাদামের উপকারিতা: বাদাম চামড়ার ড্রাক সার্কেল কমাতে সাহায্য করে। রোজ রাতে শোবার আগে খাটি বাদামের তেল আপনার চামড়ার ড্রাক সার্কেলে লাগাতে পারেন। কিছু দিনের মধ্যেই তা মুছে যাবে। যদি আপনি উজ্জ্বল চকচকে ত্বকের অধিকারী হতে চান তবে নিয়মিত বাদাম খাওয়া শুরু করতে পারেন।
সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে: সূর্যের কিরনের ফলে শরীরের চামড়ায় টেনিনের সৃষ্টি হয় ফলে কালো দাগের সৃষ্টি হয়। এর থেকে রেহাই পেতে বাদাম খাওয়া শুরু করতে পারেন।
শীতের হাত থেকে ত্বক রক্ষা: শীতকালে ত্বক রুক্ষ শুষ্ক হয়ে যেতে থাকে, এই সমস্যা দূর করতে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বাদামের তেল ত্বকে লাগাতে পারেন। ত্বক সুন্দর কমল ও চকচকে হবে।
চুলের যত্নে বাদাম: চুলের যত্নের জন্য বাদাম ব্যাবহার করা যেতে পারে। আপনি যদি সুন্দর ঘন ও মজবুত চুলের অধিকারী হতে চান তবে রোজ স্নান করার এক ঘন্টা আগে খাটি বাদামের তেল চুলে ম্যাসাজ করে নিন। চুল চকচকে ঘন মজবুত হবে এবং চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
শরীরের দুর্বলতা দূর করতে: শরীরে হারিয়ে যাওয়া শক্তি ফিরে পেতে গরম দুধের সাথে বাদামের পেস্ট মিশিয়ে অল্প পরিমাণে গরম করে খেলে শরীর তার হারানো শক্তি ফিরে পেতে থাকে।
কোমরের ব্যথা দুর করতে বাদাম: অনেকে দীর্ঘদিনের কোমরের ব্যথার কারণে ভোগেন। এরকম সমস্যা দূর করতে বাদাম খুব ভালো একটা উপকরণ। রোজ বাদাম খেলে কোমরের ব্যথা দুর করতে সহায়তা করে।
দাঁতের সমস্যা দূর করতে বাদাম: দাঁতের বিভিন্ন প্রকার সমস্যা যেমন মারি ফোলা, রক্ত পড়া, দাঁতের ব্যথা, পোকা লাগা প্রভৃতি দূর করতে বাদামের দানার উপরের পাতলা খোসা ছড়িয়ে সেটাকে পুড়িয়ে মাজন তৈরী করে প্রতিদিন ব্যাবহার করলে এই সমস্ত দাঁতের সমস্যা গুলো দুর করা সম্ভব।
মাথার খুসকি দূর করতে বাদাম: মাথার খুসকি দূর করতে বাদাম ব্যাবহার করতে পারেন। বাদামের তেল মাথার চুলের ফাঁকে ফাঁকে ভালো করে মালিশ করুন। মাথার খুসকি দুর হবে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য বাদাম: ভেজানো বাদামে ভিটামিন বি এবং ফলিক অ্যাসিড থাকে যা ক্যানসারের মতো মরণ ব্যাধির সঙ্গে লড়াই করে এবং সুস্বাস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবন পেতে সহায়তা করে।
হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা কমাতে বাদাম: অনেক ব্যক্তি এমনও আছেন যাদের পুরোদিন ধরে ভারী কাজের বোঝা ওঠাতে হয়, ফলে তাদের হাড়ের জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা অনুভব হয়। এসকল ব্যক্তিরা প্রতিদিন রাত্রে ৫ থেকে ৭ টি বাদাম জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে জয়েন্টের ব্যথা থেকে মুক্তি মিলবে।
এতো গেলো বাদামের সাধারণ কিছু গুণাবলী এছাড়াও বাদামের আরও বিশেষ কিছু উপকারিতা ও গুণাগুণ আছে সে সম্পর্কে কিছু তথ্য।
বাদাম কখন, কোন সময়, এবং কি পরিমান খেলে ভালো ফল মিলবে। বাদাম সঠিক মাত্রায় সেবন করলে অনেক প্রকার রোগের উপশন হয়। যে সকল ব্যাক্তি বাদাম খেতে শুরু করবেন তাদের হয়তো জানা থাকেনা বাদামের সঠিক মাত্রায় সেবন সম্পর্কে। তাই প্রতিদিন বাদাম সেবনের করেও সঠিক ফল মেলে না। আবার অনেক সময় উপকারের পরিবর্তে প্রবলে ফেস করতে হয়। তাই আমরা আরও জানবো বাদামের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে কিছু বিষয়।
- একদিন কতো গুলি বাদাম খাওয়া যেতে পারে ?
- কোন সময় খাওয়া যেতে পারে ?
- কোন সকল ব্যক্তিদের বাদাম খাওয়া প্রয়োজন ?
- কোন সকল ব্যক্তিদের বাদাম খাওয়ার প্রয়োজন নেই?
- ভেজা বাদাম খাবেন না শুকনো বাদাম খাবেন?
- খোলা সমেত বাদাম এবং খোলা ছড়ানো বাদামের পার্থক্য কি?
- ওজন বাড়াতে এবং কমানোর ক্ষেত্রে কখন এবং কি পদ্ধতিতে বাদাম খাওয়া উচিৎ?
বাদামে থাকে হাই কোয়ানন্টিটি প্রোটিন, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ফাইভার, কার্বোহাইড্রেট, কপার, জিঙ্ক, বায়োটিন, ভিটামিন E, ম্যাগনেসিয়াম, এবং হেলদি ফ্যাটের মাত্রা অধিক পরিমাণে থাকে। তাই একদিন কতো গুলি বাদাম খাওয়া দরকার এটা জানা খুব জরুরী।
একদিনে একমুঠো বাদাম পরিমাণে ২৩-২৪ টি বাদাম খাওয়া যেতে পারে। কিন্তুু মনে রাখতে হবে ২৩-২৪ টা বাদাম খাওয়া সর্বোচ্চ লিমিট। যে ব্যক্তি বাদাম খাওয়া শুরু করতে চান তাদের প্রতিদিন ৩-৫ টি বাদাম দিয়ে শুরু করতে পারেন। কিছু দিন বাদ বাদামের পরিমাণ ৯-১০ টি করতে পারেন।
বাদাম অধিক মাত্রায় সেবন করলে শরীরে ফাইবারের পরিমাণ বেড়ে যেতে থাকে যার ফলে পাচনতন্ত্র সঠিক বাভে কাজ করতে পারে না, হজমের প্রবলেম, পেটের ব্যাথার মতো বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্কো ব্যাক্তি যে কেউ বাদাম খাওয়া শুরু করতে পারে। যে সব ব্যক্তির পেটে পাথর বা কিডনিতে পাথরের সমস্যা আছে তাদের শুধু বাদামেই নয় যেকোনো ধরনের ড্রাই ফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ বাদাম ও অন্য কোনো ড্রাই ফুডে অক্সাইলটের মাত্রা অধিক পরিমাণে থাকে যা পাথরকে বাড়াতে সহায়তা করে।
বাদাম ভিজিয়ে খাবেন ? না শুকনো অবস্থায় খাবেন এই প্রশ্নও অনেকের কাছে অজানা। বাদামের ছালে ট্যানিন থাকে যা ইনযাইন প্রতিরোধক করে। যা হজম করতে অনেকক্ষন সময় লাগে। তাই সব চেয়ে ভালো বাদাম ভিজিয়ে খোসা ছাড়িয়ে খাওয়া। যদি আপনার ডাইজেসানের সমস্যা না থাকে তবে বাদাম ভিজিয়ে খোসা সমেত খেতে পারেন।
বাদাম সকালে ও সন্ধ্যা যেকোনো সময় খাওয়া যেতে পারে। তবে বেশি রাতে খাওয়া উচিত না। বাদাম খাওয়ার সঠিক টাইম নির্ভর করে আপনি এটি কোন কাজের জন্য খেতে চাইছেন সেই কাজের উপর। যদি আপনি জেনারেল হেলথ বেনিফিটের জন্য ব্যাবহার করতে তবে সকালে টিফিন করার আগে খেতে পারেন।